প্রবাসে থেকেও দেশীয় সংস্কৃতি পালন করেন রেজওয়ানা নাজনীন

সাকিব আল রোমান : রেজওয়ানা নাজনীন। পুতুলপরীও বলা যায়। বাবা মা এর একমাত্র মেয়ে। প্রবাসী বাঙালী। সাজসজ্জা প্রিয় শখ, শখকে পেশায় পরিণত করে বর্তমান নারী উদ্যোক্তা। স্যোসাল মিডিয়ার ফেসবুকে 'রেজ জুয়েলারী' নামে একটি অনলাইন শপ রয়েছে এই রমণীর।

রেজওয়ানা নাজনীন বলেন, বাবা মা এর একমাত্র মেয়ে আমি। অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এসেছি ছোটবেলা থেকেই। এইচ এস সি দেয়ার পরপরই খুব অল্প বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসা। তারপর কতশত স্মৃতির ইতিহাস।

তিনি বলেন, আমি এখানে (অস্ট্রেলিয়া) কম্পিউটার সাইন্স এ অনার্স শেষ করেছি। তারপর একে একে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ম্যানেজমেন্ট, মাস্টার্স অফ ম্যানেজমেন্ট আর এমবিএ শেষ করেছি। তবে, চেষ্টা করতাম সবসময় নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে একটু সফলতার ভিন্নতা খুঁজে বের করার। সেই ভাবনা থেকেই পড়াশোনার ফাঁকে চলে আমার কর্মজীবনের পথ চলা।


তিনি আরও বলেন, একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রিটেইলার 'টার্গেট অস্ট্রেলিয়া'-তে প্রথমে জয়েন করি কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে। এরপর একে একে সার্ভিস সুপারভাইজার, কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার এবং সবশেষে বিজনেস ম্যানেজার হিসেবে প্রোমশন পেয়েছিলাম।

একজন দায়িত্বশীল এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ নারী হিসেবে নিজেকে ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন। বিদেশে পড়াশোনার প্রচণ্ড চাপ, কাজের পরিশ্রম, বাবা মা এর স্নেহ মমতার স্পর্শ থেকে দূরে থাকা কোন কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারেনি রেজওয়ানাকে।

অতিত স্মৃতিচারণ করে পুতুলপরী বলেন, আমি একেবারেই ভেঙ্গে পড়ি যখন আমার মমতাময়ী মা আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তখন আমি সবেমাত্র এমবিএ শুরু করেছি। মাকে শেষবারের মতো একটিবার দেখার সুযোগ হয়নি! সেই না পারার কষ্ট আমাকে আজও কাঁদায়।

তিনি আরো বলেন, বাবাকে দেশে একা রেখে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব যখন পাই, বাবার কাছে ফিরে আসি। সত্যি বলতে দেশে ফিরে কখনো চাকরি খোঁজার তাগিদ অনুভব করিনি। আমার মেধা, আমার শিক্ষা, আমার অভিজ্ঞতা আমি অন্যকে না দিয়ে নিজের জন্য কিভাবে কাজে লাগাবো তা নিয়েই সবসময় ভাবতাম। আর হয়তো সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয় আমার 'রেজ জুয়েলারী' এর পথ চলা।

রেজওয়ানা নাজনীন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি আমার সাজসজ্জা আর পোশাক নির্বাচনে সবার থেকে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করতাম। আর এই ভিন্ন কিছুই সবার প্রশংসায় ফুটিয়ে তুলত আমার স্বকীয়তা। তাই প্রথমে শুরু করলাম গহনার ডিজাইন করা যা সবার থেকে আলাদা। তারপর খুঁজে বের করলাম সবচাইতে ভালো উপাদান, যা আমার গহনাকে সুন্দর আর আকর্ষণীয় করে তুলবে।

তিনি বলেন, আমার ডিজাইন করা প্রথম গহনা বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। সবাই যখন আমাকে উৎসাহ দিচ্ছিল, কতটা আনন্দ অনুভব করছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। সেই অনুভূতি আজও আমাকে নাড়া দেয়।

রেজ জুয়েলারী সম্পর্কে এই সিইও বলেন, শুধু অর্থই আমার রেজ জুয়েলারীর পূঁজি ছিলনা, আমার উদ্যম, আমার আবেগ, বাবার অনুপ্রেরণা আর জীবনসঙ্গীর পাশে থাকা, এই সবই ছিল আমার রেজ জুয়েলারীর এক একটি ভিত্তি প্রস্তর। রেজ জুয়েলারী দাঁড়িয়ে আছে একাধিক স্তম্ভের উপর। আমার নিজস্ব স্বকীয়তা ও রুচী, কাস্টমার সার্ভিস আর ক্রেতাদের দেয়া আমার প্রতিশ্রুতি।


তিনি জানান, সাজসজ্জা আমার শখ, আর এই শখকে আমার পেশায় পরিণত করেছি বলেই কখনো পরিশ্রান্ত হইনি, বরং এগিয়ে গেছি আরও নতুন উদ্যমে। আমি সবসময়ই নতুন ডিজাইন নিয়ে আসি, যেন আমার কাস্টমারও সবার মাঝে নিজেকে আলাদাভাবে মেলে ধরতে পারে। আমি সবসময়ই চেষ্টা করি রেজ জুয়েলারীর প্রত্যেকটি কাস্টমার এর মন জয় করতে, তাদের ভালোবাসা পেতে। আর তাদেরকে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতি আমি সবসময়ই রক্ষা করি।

তিনি আরও বলেন, আমার রেজ জুয়েলারীর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট আমি নিজেই করে থাকি। অনেক অনলাইন পেইজই বিভিন্ন মডেল বা নায়িকার গহনা পড়া ছবি দিয়ে তাদের গহনার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। আমার ধারণা এখানে একটু অন্যরকম। আমি মনে করি, মডেল বা নায়িকাদের তো সবসময়ই যে কোন গহনাতেই সুন্দর দেখায়, তাদের ছবি দেখে সব কিছুই ভালো লাগবে। কিন্তু যেই গহনা নিজের গাঁয়ে সুন্দর দেখায়, সেটাই সবার পছন্দ করা উচিত। এ কারণেই আমার গহনার মডেল আমি নিজেই হই। যেই গহনায় আমার মতো সাধারণ মানুষকে মানাবে তা আমার রেজ জুয়েলারীর ক্রেতাদেরকে ও রূপবতী করে তুলবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। 

Post a Comment

0 Comments